বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২০ ও বাংলাদেশ
আজ ১০ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে ১৯৯২ সালে “ওয়াল্ড ফেডারেশন অব মেন্টাল হেলথ” প্রথম বারের মতো বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস (World Mental Health Day) পালন করে। ঐ সময়ে রিচার্ড হান্টার ছিলেন ঐ ফেডারেশনের ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি। ঐ সময় থেকে প্রতি বছর ১০ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন ও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে যেখানে মনোবিজ্ঞান পড়ান হয়, গবেষণা করা হয় এবং মনোবিজ্ঞানের সে সমস্ত এসোসিয়েশন বাংলাদেশে আছে তারা এই দিবসটি পালন করে আসছে।
যদিও প্রথম বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের কোন প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল না। কিন্ত এরপর থেকে প্রতি বছর একটা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী ঐ বছর ঐ বিষয়ের উপর সবাইকে সচেতন করা হয় এবং সাঁরা বছর ঐ বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
এ বছর মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের (World Mental Health Day) মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হল “সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অধিক বিনিয়োগ অবাধ সুযোগ।” বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্রিতিপাদ্য বিষয়টি অত্যন্ত সময় উপযোগী যুক্তি সংগত। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার তথ্য মতে, সাঁরা বিশ্বে চারজনে একজনের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন। সেই হিসেব মতে বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগনের জন্য ৪ কোটি জনগনেরই এই সেবা প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে “ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সারভে” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে উঠে আসে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এতে হিসেব করলে দেখা যায় দেশে পনে তিন কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
কোভিট-১৯ সময়ের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে এই চিত্র আরও ভয়াভহ। ল্যানসেট জার্নালের তথ্য মতে করোনা কালীন সময়ে লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনের কারণে এই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি মানুষ, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত বলে উঠে এসেছে। সে হিসেব মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৯ কোটি মানুষ কোন কোন ভাবে মানসিক ভাবে অসুস্থ্য। তাই এবারের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য (World Mental Health) দিবসের প্রতিপাদ্যে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য খাতে যদি আমরা অধিক বিনিয়োগ করি তাহলে আমরা অধিক লাভবান হবো। মানসিক ভাবে আমরা থাকবো বেশি সুস্থ্য, সতেজ আর তবেই নিশ্চিত হবে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সুপ্ত সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ।
তাই আসুন আর দেরি নয় আজই আমরা মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করি, আর নিশ্চিত করি আমাদের সন্তানের, ছাত্র-ছাত্রিদে্র, আমাদের প্রীতিটি নাগরিকের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ।
লেখক- মোঃ শাহীনুর রহমান , সহকারী অধ্যাপক মনোবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।