ডিপ্রেশন (Depression) হল একটি অস্বাস্থ্যকর নেতিবাচক আবেগ যা একটি অযৌক্তিক / যুক্তিহীন অথবা ক্ষতিকর/ বিপজ্জনক বিশ্বাসের কারণে উদ্রেক হয় সত্যিকার ক্ষতি কিংবা ক্ষতির সম্ভ্যাবনা অনুভব করতে বাধ্য করে। আর এক ভাবে বলা যায়, ডিপ্রেশন হল অযৌক্তিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা একটি নেতিবাচক আবেগ যা ব্যক্তির মনে অসফল, ব্যর্থ ও সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এমন অনুভুতির জন্ম দেয়।
অনেকে বিষন্নতাকে (Depression) কে দু:খবোধ (Sadness) বলে মনি করি। প্রকৃতপক্ষে এ দুটো আলাদা ধরনের আবেগ। দু:খবোধ (Sadness) ও বিষণ্ণতা (Depression) উভয়ই একটি নেতিবাচক আবেগ হলেও, দুঃখবোধ একটি স্বাস্থ্যকর আবেগ যা এমনিতে সেরে যায়, অপরদিকে বিষণ্ণতা স্বাস্থ্যের জন্য একটি ক্ষতিকর আবেগ ও মারাত্মক মানসিক সমস্যা তৈরি করে, যার চিকিৎসার জন্য মেডিসিন এবং সাইকথেরাপির প্রয়োজন হয়।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত?
সাধারনত আমরা প্রত্যকে জীবনের কোন না কোন সময় বিষণ্ণতা অনুভব করলেও কিছু সময়ের পরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি। কিন্তু এই বিষণ্ণ অনুভূতি যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তবে তার চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। নীচের লক্ষণগুলো থাকলে বুঝবেন আপনি বিশন্নতায় আক্রান্ত এবং আপনার চিকিৎসকের সহযোগিতা নেয়া প্রয়োজন।
ডিপ্রেশনের ৯টি লক্ষণ
ক. নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে ৫ টি (বা আরও বেশি) লক্ষণ একই সাথে ২ সপ্তাহ ধরে উপস্থিত থাকলে এবং ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হলে এবং লক্ষণগুলোর মধ্যে কমপক্ষে একটি (১) মনমরা/ বিষণ্ণভাব বা (২) কাজে অনিহা বা আনন্দ না পাওয়া থাকলে বিষন্নতা (Depression) উপস্থিত।
১) বিষণ্ণবোধঃ বিষণ্ণ, মনমরা, হতাশা প্রায় প্রতিদিন কিংবা দিনের বেশি ভাগ সময় থাকবে এবং ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারবে (যেমন, দু:খি থাকা, শূন্য অনুভব, হতাশ বোধ করা প্রভৃতি) বা অন্যেরা বুঝতে পারবে (যেমন- কান্না করা)। (বিঃ দ্রঃ শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ হতে পারে)
২) আগ্রহ হারানোঃ প্রায় সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্যভাবে আগ্রহ, আনন্দ হ্রাস পাবে, যা প্রায় প্রতিদিন বা দিনের বেশি ভাগ সময় থাকবে (ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারবে বা অন্যেরা বুঝতে পারবেন)
৩) ওজনের হের ফেরঃ ডায়েটিং না করা স্বত্বেও ওজন হ্রাস (যেমন শরীরের ওজনের 5% হ্রাস পাবে) বা বৃদ্ধি পাবে অথবা ক্ষুধা হ্রাস বা বৃদ্ধি পাবে (বি দ্র: শিশুর স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি ব্যহত হবে)।
৪) ঘুমের সমস্যা (sleep problem): প্রায় প্রতিদিন অনিদ্রা বা অনেক বেশি ঘুমানো (হাইপারসমনিয়া) জাতীয় ঘুমের সমস্যা।
৫) অস্থিরতা (Feeling of restlessness): প্রায় প্রতিদিন মানসিক উৎকণ্ঠা/অস্থিরতা(Psychomotor agitation)যেমন- স্থির হয়ে বসে থাকতে না পারা, পায়চারী করা, অথবা চিন্তাশক্তির বৈকল্য (Psychomotor retardation) যেমন- ফিসফিস করে কথা বলা, কাজকর্মের গতি কমে যাওয়া, অল্প কথায় বা এক/দুই শব্দে উত্তর দেওয়া, চুপ করে বসে থাকা, কারো সাথে কথা না বলা, আলো নিভিয়ে অন্ধকারে একা বসে থাকা প্রভৃতি)।
৬) শক্তি কমে যাওয়া (Loss of energy): প্রায় প্রতিদিন বা দিনের বেশিভাগ সময় ক্লান্তি অনুভব করা বা শক্তি হ্রাস পাওয়া, শরীরে বল না পাওয়া।
৭) অযোগ্য মনে করাঃ (worthlessness) প্রায় প্রতিদিন নিজেকে অনেক বেশি মূল্যহীন, অযোগ্য, অপদার্থ মনে করা বা অত্যধিক অপরাধ বোধ অনুভব করা।
৮) মনোযোগের সমস্যাঃ (Attention problem): প্রায় প্রতিদিনই চিন্তাভাবনা, মনোযোগ, মনোনিবেশ করতে সমস্যা বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।
৯) মৃত্যুর চিন্তা (Thought of death): বার বার মৃত্যুর চিন্তা (শুধুমাত্র মৃত্যুর ভয়ে নয়)করা, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই নিজেকে আঘাত করা বা আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করা বা আত্মহত্যা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা।
খ) এই লক্ষণগুলি সামাজিক, পারিবারিক, পেশাগত কিংবা দৈনন্দিন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলা।
গ) উপরের লক্ষণ গুলো কোন দ্রব্য গ্রহণ যেমন- মাদক/ড্রাগ/ওষুধ কিংবা অন্য কোন চিকিৎসাধীন অবস্থা বা শারীরিক সমস্যার কারণে হবে না।
তবে লক্ষণগুলোর দু একটি সামান্য মাত্রায় দেখা দিলে অনেক সময় তা এমনিতেই সেরে যায়। অনেক সময় বন্ধু-বান্ধব/প্রিয়জনের সাথে সমস্যা শেয়ার করে কিংবা এই বিষয়ে বিভিন্ন টিপস ফলো করে মৃদু মাত্রার বিষণ্ণ বোধ কে আপনি নিজেই সমাধান করতে পারেন। তবে, লক্ষণগুলো উল্লেখিত সময় ধরে দেখা দিলে এবং দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রমকে ব্যহত করলেই কেবলমাত্র অভিজ্ঞ সাইকোলোজিস্ট/ সাইকোথেরাপিস্ট/ মনঃচিকিৎসকের সহযোগিতা নেয়ার প্রয়োজন পড়বে।