আসুন সন্তানকে বিনয়ী হতে শেখাই । বর্তমান সমাজে বিনয়ী ব্যাক্তি পাওয়া বিরল। আমাদের পিতামাতারা তাদের সন্তানকে বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে একজন প্রকৃত আদর্শ, সুখী ও সুনাগরিক তৈরি করতে পারেন। আর তাই প্রয়োজন সন্তানকে বিনয়ী হওয়া শেখানো।
বিনয়ী বা ন্ম্র হওয়ার অর্থ কী?
একজন বিনয়ী ব্যক্তি অন্যদের সম্মান করেন। তারা অন্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন না এবং এমনটাও আশা করেন না যে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখা হবে। এর পরিবর্তে, একজন বিনয়ী ব্যক্তি অন্যদের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ দেখান এবং তাদের কাছ থেকে শিখতে ইচ্ছুক থাকেন। কখনো কখনো নম্রতা বা বিনয়ীকে একটা দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আসলে এটা এমন এক শক্তি, যা একজন ব্যক্তিকে তার ভুলগুলো শনাক্ত করতে ও সীমাবদ্ধতাগুলো স্বীকার করতে সাহায্য করে। কাজেই আসুন সন্তানকে বিনয়ী হতে শেখাই।
কেন বিনয়ী বা নম্র হওয়া প্রয়োজন?
বিনয়ী হওয়ার মাধ্যমে উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়ঃ দ্যা নারসিসিশম্ এপিডেমিক নামক গ্রন্থ মতে, “বিনয়ী ব্যক্তিরা সহজেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে।” আর, এই ধরনের ব্যক্তিরা “অন্যদের সঙ্গে সহজেই মিশতে পারে ও সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে।” যার দরুন তারা অপরের সাথে দীর্ঘস্থায়ী ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
বিনয়ী হওয়া সন্তানের জন্য জরুরীঃ বিনয়ী হতে শেখার মাধ্যমে আপনার সন্তান বর্তমানে ও ভবিষ্যতে উপকার লাভ করতে পারবে। যেমন- ন্ম্র হওয়ার মাধ্যমে আপনার সন্তান অপরকে সন্মান করতে শিখবে, অন্যদের কাছ থেকে শেখার আগ্রহ তৈরি হবে যা তাদের ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধি বিকাশে সহায়ক হবে, সৃজনশীল চিন্তা করতে পারবে, একজন ভাল মানুষ হতে প্রেরণা জোগাবে। তাছাড়া গবেষণায় দেখাগেছে ন্ম্র ব্যক্তিরা ব্যক্তি জীবনে বেশি সুখী এবং সফল। কাজেই আসুন সন্তানকে বিনয়ী হতে শেখাই।
যেভাবে নম্র বা বিনয়ী হতে শেখাবেন
নিজের বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে উৎসাহিত করুন-
সন্তানদের সামনে বার বার অবাস্তব উক্তি করা এড়িয়ে চলুনঃ “তোমার সব স্বপ্ন সত্যি হবে” এবং “তুমি যা হতে চাও তা-ই হতে পার” শুনতে খুবই উৎসাহজনক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রায়ই তেমনটা ঘটে না। আপনার সন্তান যদি তার নিজের জীবনে যুক্তিযুক্ত লক্ষ্য স্থাপন করে আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, তা হলে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
নির্দিষ্ট কাজের জন্য তাদের প্রশংসা করুনঃ তুমি “খুবই ভালো করছ” শুধুমাত্র এইরকম বলে তাকে প্রশংসা না করে বরং সন্তানদের নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে তার প্রশংসা করুন।
সন্তানদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করুনঃ সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়ই সকলেই নিজেদেরকে—নিজেদের প্রতিভা ও সাফল্যের বিষয়গুলো—জাহির করে, যেটা নম্রতার বিপরীত।
আপনার সন্তানকে দ্রুত ক্ষমা চাওয়ার জন্য উৎসাহিত করুনঃ আপনার সন্তান যখন কিছু ভুল করে, তখন তাকে সেটা বুঝতে এবং স্বীকার করতে সাহায্য করুন।
কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন-
অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শেখানঃ আপনার সন্তানকে স্মরণ করিয়ে দিন যে, অন্যেরা তার চেয়ে কোনো না কোনো উপায়ে শ্রেষ্ঠ আর আপনার সন্তান যেন অন্যদের দক্ষতা দেখে হিংসা না করে বরং তাদের কাছ থেকে শেখার মনোভাব রাখে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শেখানঃ আপনার সন্তানকে আন্তরিকতার সঙ্গে “ধন্যবাদ” বলতে শেখান। কৃতজ্ঞ হওয়া নম্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ঘরের টুকিটাকি কাজ করতে শেখানঃ আপনি যদি আপনার সন্তানকে বলেন যে, ঘরের কাজগুলো তার করার প্রয়োজন নেই, তা হলে সে মনে করতে পারে, যে কাজগুলো সে করতে চায়, শুধু সেগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধূলার চেয়ে ঘরের কাজকে এগিয়ে রাখতে হবে। এই বিষয়টা তুলে ধরুন যে, কীভাবে ঘরের টুকিটাকি কাজগুলো করার মাধ্যমে অন্যেরা উপকার লাভ করবে এবং সেইসঙ্গে অন্যেরা তার কাজের প্রতি উপলব্ধি দেখাবে ও তাকে সম্মান করবে। একজন সন্তান যখন ঘরের টুকিটাকি কাজ করতে শেখে, তখন তার পক্ষে বড়ো হয়ে অন্যদের সঙ্গে কাজ করা আরও সহজ হয়ে যায়।
অন্যদের সাহায্য করতে শেখানঃ আপনার সন্তানকে বুঝতে সাহায্য করুন যে, অন্যদের জন্য কিছু করা ভালো বিষয়। অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে সন্তানরা অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে। তাই সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে আপনার সন্তানকে সাহায্য করুন। তার সঙ্গে আলোচনা করুন যে, তাদের সাহায্য করার জন্য সে কী করতে পারে। সে যখন অন্যদের সাহায্য করবে তখন তাকে প্রশংসা ও সমর্থন করুন।
পরিশেষে বলা যায়, সন্তানদের সামনে অবাস্তব উক্তি এড়িয়ে, নির্দিষ্ট কাজের প্রশংসা করে, সোশ্যাল মিডিয়ার সীমা টেনে এবং দ্রুত ক্ষমা চাওয়া, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, ঘরের টুকিটাকি কাজ করা, ও অন্যকে সাহায্য করা শিখিয়ে আমরা আমাদের সন্তানকে বিনয়ী বা নম্র হওয়া শেখাতে পারি। কাজেই আসুন আমাদের সন্তানকে আজই বিনয়ী হতে শেখাই ও ন্ম্রতার শিক্ষা দেই এবং একজন সুখী ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ www.jw.org