-মোঃ শাহিনুর রহমান,
পি এইচ ডি গবেষক, স্কুল অব সাইকোলজি, সেন্ট্রাল চায়না নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়।
হাসতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু সব সময় হাসতে কি কারণ লাগে। শারীরিক, মানসিক, পরিবেশগত, মস্তিস্ক বিকৃত জনিত, লাফিং গ্যাস ইত্যাদি আরও কত কত কারণ। বিজ্ঞানীরা তাতেই ক্ষান্ত নন, আরও নতুন নতুন কারণ খুজে বের করতেই ব্যস্ত। একটি জোকস শুনে কেউ আমরা হাসিতে ফেটে পড়ি আবার কেউ মুচকি হাসি, আবার কেউ মুখে কুলপ আটি – হাসির বোমা ফাটালেও বেরুবে না এক চিমটি হাসি। আপনি যদি প্রথম ধরনের ব্যক্তি হন তাহলে আপনি হাস্যরসিক ব্যক্তি। অর্থাৎ আপনার সেন্স অব হিউমার অনেক বেশি। সম্প্রতি শরীরবিজ্ঞানীগণ দাবি করছেন আপনার এই কম বা বেশি বা না হাসার জন্য দায়ী হল ছোট 5-HTTLPR (Serotonin-Transporter-Linked Polymorphic Region) নামক এক জোড়া জীন।
স্বর্গীয় হাসির এই আবেগীয় অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের একরকম হলেও হাস্যরসবোধ কিংবা হাসার ক্ষমতা কিন্তু এক নয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, হাস্যরস একটি শিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠার সময় এটি ব্যক্তির উপর প্রভাব ফেলে এবং বিকাশ লাভ করে। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক তত্ত্ব যেমন- সুপারিওরিটি, এরোসাল এবং ডেসক্রিপেন্সি তত্ত্ব। শরীরবিজ্ঞানীগণ এতে মোটেও সন্তুষ্ট নন, তাদের দাবি হাস্যরসবোধের এই তারতম্যর কারণ হল একটি নির্দিষ্ট জেনেটিক সিকোয়েন্স ।
রসবোধের উপর, জীনের প্রভাব কতটুক তা প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লাগেন নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিজ্ঞানী Claudia M. Haase এবং জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী Ursula Beermann। তারা 5-HTTLPR নামক একজোড়া খর্বাকৃতি ও এক জোড়া লম্বা জীন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। এই জীন সাধারণত আমাদের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এই গবেষণায় উনারা তিনটি পরীক্ষণ পরিচালনা করেন বার্কলেতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এ Dacher Keltner ও Robert W. Levenson এর গবেষণাগারে। এখানেই কম ও বেশি হাসে এমন এক দল যুবক, মধ্য বয়সী ও বুড়োদের উপর নিরীক্ষা করে তারা মুচকি হাসি ও শব্দ করে হাসার তারতম্য নির্ণয় করেন।
প্রথম, পরীক্ষণে গবেষকরা একদল যুবককে কিছু কার্টুন দেখান। দ্বিতীয়, পরীক্ষণে যুবক, মধ্য বয়সী ও বয়স্ক একদল ব্যক্তি কে একটি হাস্যরস সম্পন্ন সিনেমার অংশ বিশেষ দেখান। তৃতীয়, পরীক্ষণে মধ্য বয়সী ও বয়স্কদের স্পাউস কে তাদের বিবাহিত জীবনের দ্বিমত সম্পর্কে আলোচনা করতে বলেন। পরীক্ষণ চলাকালীন সময়ে তাদের হাসি ও মুখের অভিব্যক্তির ভিডিও চিত্র ধারণ করেন এবং মুখের লালা সংগ্রহ করেন। পরে, মুখের অভিব্যক্তি Facial Action Coding System এর মাধ্যমে উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন। এই কোডিং পদ্ধতিতে মুখমণ্ডলের প্রতিটি নড়াচড়া নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। অপরদিকে সংগৃহীত লালা থেকে 5-HTTLPR এর ছোট ও লম্বা জীনের উপস্থিতি শনাক্ত করেন। এই পরীক্ষাণে ৩৩৬ জন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অংশ নেন।
ফলাফলে বিজ্ঞানীগণ দেখতে পান, যাদের মধ্যে ছোট 5-HTTLPR জীনের উপস্থিতি বেশি, তারা বেশি ইতিবাচক আবেগ প্রকাশ করে। লম্বা 5-HTTLPR জীনের তুলনায় ছোট 5-HTTLPR জীন বহনকারী ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে বেশি হাসি হাসে, সেটা মৃদু হাসি কিংবা উচ্চ হাসি যাই হোক না কেন। গবেষকরা আরও বলেন, এই ছোট জীনটি ভালো ও খারাপ পরিস্থিতিতে সমান ভাবে সংবেদনশীল, নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম এবং এতে কোনরকম ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই। অপরদিকে লম্বা জীনটি সব পরিস্থিতিতে সংবেদনশীল নয়।
এতদিন ধারণা করা হত, হাস্যরস বোধ কেবল একটি শিক্ষা অর্জিত চারিত্রিক গুণ। কিন্তু শরীর বিজ্ঞানীগণের এই ফলাফল ন্যচার ভার্সেস নারচার দ্বন্দ্বে, ন্যচারের পক্ষে জীন ভিত্তিক এই তথ্য বৈজ্ঞানিক কারণ কে আরও সমৃদ্ধি করলো। যদিও এ দুয়ের যুগপৎ প্রভাব কে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কারণ যাই হোক না কেন হাসতে কারও মানা নেই। আসুন হাসি কারণে কিংবা অকারণে এবং সুস্থ থাকি। হা হা হা……।
Sources: Beerman U, Haase CM, Keltner DJ et al. Short Alleles, Bigger Smiles. Emotion. 2015.
One Response
nice writing