কারো সামনে সুন্দরভাবে কথা বলা একটি চমৎকার দক্ষতা যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত সবক্ষেত্রে বেশ কাজে লাগে। বিশেষ করে আপনাকে যদি কাউকে কিছু বোঝানোর প্রয়োজন হয় তাহলে তো কথাই নেই। বিশ্বের অন্যতম ধনী ও্যারেন বাফেট মনে করেন ক্যারিয়ারের উন্নতির পিছনে এই দক্ষতা খুবই সহায়ক । আপনি যদি পৃথিবীকে বদলে দিতে চান তবে আপনার এই দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই।
বিষয়
যে বিষয়টি আপনাকে নাড়া দেয় এমন একটি বিষয় নির্বাচন করুন। যেটা পড়ার সময় গভীর ভাবে তা জানার জন্য ভিতরে ভিতরে আপনি উদ্দিপনা অনুভব করেন এবং শেখার জন্য আরও অনেক চেষ্টা চালান। এরকম বিষয় যা আপনার মধ্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে ফলে, তা অন্যকে জানানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। এমন বিষয়ই সাধারনত শ্রোতাদের অনুপ্রেরণীত করে থাকে। যখন আমরা কারো সামনে কথা বলি, তখন আপনার এই তীব্র কামনা কিংবা আকাঙ্ক্ষা শ্রোতাদের কাছে একটা শক্তিশালী প্রেরনা হিসেবে কাজ করে। এটা এক ঝলকানিতে শ্রোতার মর্ম স্পর্শ করে ফেলে। কাজেই, বিষয় নির্বাচনে এটা খেয়াল রাখুন।
একটি সাধারণ বার্তা
প্রত্যেক বিষয়কেই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যখ্যা করা যায়। কিন্তু, শ্রোতাদের মনোযোগ ক্ষমতা থাকে সীমিত এবং থাকে জীবনের নানা ঘটনা চিন্তা-ভাবনা, তাই যদি আমরা খুব বেশি বলে ফেলি তবে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই, একটা বার্তা দিতে ততপর থাকতে হবে, ক্রিস অ্যান্ডারসন এর মতে সেটি যেন হয় যথার্থ ও উপযোগী একটি বার্তা। একটি বক্তব্য ভাল হবে তখনই যখন সেটা শ্রোতার মাথায় একটা সৃজনশীলতার বীজ বপন করতে পারবে। অতপর সে বীজ অঙ্কুরিত হবে যা জীবন বলদিয়ে দিবে এবং সে গল্প আরেকজনের সাথে শেয়ার করবে।
কাঠামো
আজ থেকে ২০০০ বছর আগে, গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল ভাল বক্তব্যর তিনটি নিয়মের কথা বলেছিলেনঃ ১) বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা, ২) ভাল যুক্তি দেয়া ৩) আবেগের উদ্রেক করা। কিন্তু, আপনি নিজের জীবনের গল্প অথবা একটি সাম্প্রতিক সমস্যা ও তার সমাধান তুলে ধরতে পারেন।
সাহায্য নিন
একটি ভাল পদ্ধতি হল টুকরো কাগজে টুকে নেয়া। প্রতিটি যুক্তির জন্য একটি করে আলাদা কাগজের টুকরো ব্যবহার করা এবং বলার সময় অনুযায়ী তা হাত পরিবর্তন করা। পেশাদার ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় তাদের চিন্তা ধারা স্লাইডের মাধ্যমে শেয়ার করেন। আপনার কাছে দেখানোর জন্য কোন পণ্য থাকলে তা ব্যবহার করে দেখান। যদি বক্তব্য মুখস্ত করার চেষ্টা করেন এবং হাতে ১ ঘণ্টা সময় থাকে তবে, ২০মিনিট পড়ার জন্য, ৪০মিনিট অনুশীলনের জন্য ব্যয় করুন। সাধারণত, এটাই সবচেয়ে আদর্শ অনুপাত।
তাদের ভাষায় কথা বলুন
এটা ব্যপার না যে আপনি কি বলছেন, ব্যপার হল শ্রোতারা কি শুনছেন। আমেরিকার নারডরাইটার এর মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন ভাবে কথা বলেন যে ঐ দেশের পাচ বছরের বাচ্চারাও তা পরিষ্কার বুঝতে পারে। বিখ্যাত লেখক গাই কাওয়াসাকি সরাসরি আসল কথা বলার পরামর্শ দেন। কেউ জানতে চায়না একটা ব্যাটারি কত বড় বরং সবাই জানতে চায়, সেটি তারা কতদিন ব্যবহার করতে পারবে। যখন প্রস্তুতি নিবেন তখন নিজেকে জিজ্ঞাসা করে নিন আপনার আলোচ্য বিষয়টি ঐ শ্রোতাদের জন্য কতটুকু গুরুত্ববহ।
অনুশীলন করুন
বক্তব্য দেয়ার পূর্বে অনুশীলন করে নিন। হাত ও তালু খোলা রেখে, উপরের দিকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচু স্বরে ও পরিষ্কার ভাষায় এবং শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে। বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা প্রয়োজনে এমন বন্ধুর সামনে কথা বলে অনুশীলন করতে পারেন। তারা আপনার মুল কথা ধরতে পারে কিনা পরখ করে নিন। অথবা আপনি নিজেই নিজের ভিডিও রেকর্ড করে দেখতে পারেন।
মঞ্চ সম্পর্কে জেনে নিন
রুম কত বড় হবে, কতজন বক্তব্য শুনবে, মাইক্রোফোন লাগবে কিনা আগে থেকে জেনে নিন। সফল পেশাদার বক্তারা মঞ্চের পিছনের বাম দিক দিয়ে কোনাকোনিভাবে প্রবেশ করতে চায় কেননা এভাবে প্রবেশ করা বেশ প্রাণবন্ত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, প্যাশন আছে এমন বিষয় নির্বাচন করে, নিজের জীবনের গল্পের মাধ্যমে একটা মেসেজ জুড়ে দিয়ে, চিন্তা ভাবনা প্রয়োজনে কাগজে টুকে নিয়ে, শ্রোতাদের মতো ভাষায় কথা বলা অনুশীলন করে এবং মঞ্চ সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলা সম্ভব।